শুক্রবার, ০৫ মার্চ ২০২১, ১২:৫১ অপরাহ্ন
সোহানুল হক পারভেজ :
যৌতুকের দাবীতে মসজিদ ও মাদ্রাসার প্রভাবশালী সভাপতির বিরুদ্ধে স্ত্রী নির্যাতন মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্ত্রী রুমা বেগম নিজেই বাদী হয়ে রাজশাহীর আদালতে গত বৃহস্পতিবার মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় পাষন্ড স্বামী মহসিনসহ তার ৪ দুলাভাইকে আসামী দেখানো হয়।
মামলার এজাহার ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী জেলার তানোর পৌর এলাকার জিওল গ্রামের মসজিদ ও দাখিল মাদ্রাসার প্রভাবশালী সভাপতি মহসিন রেজা যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানুষিক ভাবে বর্বর নির্যাতন করে। পরে মূমূর্ষ অবস্থায় হতভাগা ওই গৃহবধুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ভর্তি করা হয়। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির পর পাষন্ড স্বামী ও তার লোকজনের অত্যাচারে ওই গৃহবধূ পালিয়ে চিকিৎসা নেন জেলা সদর হাসপাতালে। বর্বর এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে গত মাসের ৩০ জুলাই মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তানোর পৌরশহরের জিওল গ্রামের মৃত ফাইজদ্দিন হাজীর পুত্র প্রভাবশালী মহসিন রেজার বাড়িতে।
তবে, বর্বর কায়দায় সংগঠিত নির্যাতনের আগের দিন সোমবার (২৯ জুলাই) স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও তানোর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর উজ্জল হোসেন ওই দম্পতির সব ধরনের দ্ব›দ্ব মিমাংসা করে দেন। তবে, স্ত্রীকে আপাতত পিতার বাড়িতে যেতে মৌখিক ভাবে নির্দেশ দেন ওই হাউজে উপস্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর উজ্জল হোসেন ও মহসিনের দুলাভাই মুনজু, নূরুল মেম্বার, আতাউর ও হাইয়াত। এদের অনুরোধে রুমা বেগম তার দুই সন্তান নিয়ে পিতার বাড়িতে চলে যান। আর এই সুযোগেই দুলাভাইদের কু-পরামর্শে মসজিদ ও মাদ্রাসার প্রভাবশালী সভাপতি মহসিন রেজা স্ত্রীকে ঘটনার পরদিন তালাক দেন।
এদিকে, সকালে স্ত্রী রুমা বেগম তালাকের খবর শোনে স্বামীর বাড়িতে এসে অবস্থান নেন। এঅবস্থায় স্ত্রীকে তাড়ানোর জন্য শারীরিক ও মানুষিক ভাবে বর্বর নির্যাতন করে ঘরে বন্দি রাখে মহসিন। পরে প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বিষয়টি নিয়ে দায় এড়ানোর জন্য মহসিন নিজেই তার আস্থাভাজন থানা পুলিশের এসআই হামিদুর ওরফে হামিদকে মোবাইলে বিষয়টি জানান।
এসআই হামিদ মহসিন ও তার লোকজন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মেডিকেলে চিকিৎসাধীন স্ত্রী রুমা বেগমকে বের করে দেন। এসময় মেয়ের বাবা আব্দুর রহিম প্রতিবাদ জানান। এতে এসআই ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়ের বাবাকে অপমান অপদস্থ করে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভিতি দেখান। ফলে নিরুপাই মেয়ের বাবা ভুক্তভোগী রুমা বেগমকে নিয়ে উপজেলা হাসপাতাল ছেড়ে জেলা সদরের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) ভর্তি করা হয়। স্ত্রী নির্যাতনকারী অভিযুক্ত মহসিন রেজা বলছেন, তার স্ত্রী তার বাধ্য নয়। একারণে তাকে তালাক দিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। এখন যা হবার তা আইনি প্রক্রিয়ায় হবে বলে দম্ভোক্তি করেন তিনি।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, উপজেলার ছাঐড় হরিপুর গ্রামের আব্দুর রহিম মাস্টারের মেয়ে রুমা বেগমকে প্রায় ১৫ বছর আগে বিয়ে করেন তানোর পৌর এলাকার জিওল গ্রামের মহসিন রেজা। বিয়ের পর থেকে প্রায় সময় স্ত্রী রুমা বেগমকে বিভিন্ন কারণে অকারণে নির্যাতন করতেন মহসিন রেজা। এঅবস্থায় তাদের দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান হয়।
আব্দুর রহিম জানান, জামাইয়ের অনেক জমি-জমা থাকা সত্তে¡ও লোভী। সে ধানাঢ়্য ও সম্পদশালী বলে অহাংকার করে। জামাই মহসিন আমার মেয়েকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করবে, এজন্য পারমিশন দিতে হবে। নইলে তালাক নিতে হবে। বর্তমানে জামাইয়ের প্রায় ১ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণ আছে। এছাড়াও প্রায় ৪০ বিঘা জমি ৫০ লক্ষ টাকায় বন্ধক রাখা হয়েছে। বর্তমানে ঋণগ্রস্থ হওয়ায় তার ঋণ আমাকে শোধ করার ব্যবস্থা করতে হবে বলে দম্ভোক্তি করে। অনেক কিছু দেবার পরও বর্তমানে মেয়ের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের মাত্রা বেরে গেছে। ফলে মেয়ের জীবনে অশান্তি নেমে এসেছে। এঅবস্থায় তার মেয়েকে তালাকও দিয়েছে যৌতুক লোভী জামাই মহসিন।
মেয়ের বাবা আব্দুর রহিম আপেক্ষ করে কান্না জড়িত কন্ঠে আরো বলেন, মহসিন রেজার দ্বারা থানা পুলিশের উপ-পরির্দশক (এসআই) হামিদুর ওরফে হামিদ প্রভাবিত হয়ে মেডিকেলে তাকে অন্যায়ভাবে আপমান অপদস্ত করেছেন। হুমকী দিয়ে বলেছেন, জিওল গ্রামের মহসিন ও দুলাল প্রভাবশালী লোক। ওরা দু’জন বড় ব্যবসায়ী। তিনি আরো বলেন, তার মেয়েকে শারীরিক ও মানষিক ভাবে নির্যাতন করে অপরাধী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পুলিশের নাকের ডোগায়। তিনি থানায় মেয়ে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন পুলিশ তা দেখেও না দেখার ভান করছেন।
মেয়ের বাবা আব্দুর রহিম বলেন, এঘটনার প্রায় ৫ বছর আগে যৌতিক লোভী জামাই মহসিন রেজার নিযার্তন সইতে না পেরে মেয়ে তার বাড়িতে চলে আসে। পরে রাজশাহীর আদালতে মেয়ে নির্যাতনের মামলা করা হয়। মামলা হতে মুক্তি পেতে ওই সময় জামাই মহসিন রেজা শর্ত সাপেক্ষে আপোষ করে নেন। তখন আদালতের বাইরে ২৫ লক্ষ টাকা দেন মোহর ধার্য্য করে বিয়ে আবার রেজিস্ট্রি হয়। তবেই আদালত থেকে মুক্তি পান মহসিন রেজা। কিন্তু তার স্বভাব একটুকুও বদলাইনি। জামাই দ্বিতীয় বিয়ে করবে। মেয়েকে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দিতে হবে বলে নির্যাতন করে তালাক দেয় জামাই মহসিন।
এদিকে, তানোর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হামিদুর ওরফে হামিদের কাছে ঘটনা সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি কিছুই জানেন না বলে এড়িয়ে গিয়ে মোবাইল সংযোগ বিছিন্ন করেন।
তানোর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ইসলাম জানান, তিনি ঘটনা সম্পর্কে অবগত নন। আদলতে করা মামলার নথি থানায় আসেনি। যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে মেয়েকে থানায় আসতে বলেন। মেয়ে এসে অভিযোগ করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ওসি খায়রুল ইসলাম।
© কপিরাইট : খন্দকার মিডিয়া গ্রুপ
বাল্যবিবাহ রোধ করুন, মাদক মুক্ত সমাজ গড়ুন।