রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১, ০৯:০০ অপরাহ্ন
ইমরান হোসাইন, নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর তানোরে জিওল গ্রামের ‘ফেরেস্তা’ নামে পরিচিত মহসিন রেজা যৌতুকের দাবিতে তার স্ত্রীকে নির্যাতন করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এই সেই ফেরেস্তা নামের মানুষটি প্রভাব খাটিয়ে ১০ বছর ধরে মসজিদ, মাদ্রাসা ও ঈদগাঁর সভাপতি রয়েছেন। কিন্তু নিজ ঘরে তিনি অত্যাচারকারী স্বামী। বিয়ের পর থেকে তার স্ত্রীকে ১৬ বছর ধরে নির্যাতন করে আসছেন।
ফলে স্ত্রী রুমা খাতুন নিজেই বাদী হয়ে রাজশাহীর বিজ্ঞ আমলী আদালতে ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় চলতি বছরের ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং ২৩২/১৯সি তানোর। মামলায় ‘ফেরেস্তা’ নামে উপাধি পাওয়া স্বামী মহসিনসহ তার দুই বোন ও এক দুলাভাইকে আসামী দেখানো হয়।
মামলার এজাহার ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী জেলার তানোর পৌর এলাকার জিওল গ্রামের মসজিদ ও দাখিল মাদ্রাসার প্রভাবশালী সভাপতি মহসিন রেজা যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানুষিক ভাবে বর্বর নির্যাতন করে ঘরে বন্দি রাখে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে।
কাজী অফিস সূত্রে জানা যায়, ২১ হাজার ৫০১ টাকা দেন মোহর ধার্য্য করে ২০০২ সালের ১৪ আগস্ট বিয়ে হয় উপজেলার জিওল গ্রামের মহসিন রেজার সঙ্গে একই উপজেলার হরিপুর গ্রামের রুমা খাতুনের।
কিন্তু বছর ছয়েক পর যৌতুকের দাবিতে মহসিন স্ত্রীকে মারপিট করে তাড়িয়ে দেন। পরে থানা কোর্ট করে গত ২০০৮ সালের ১২ জুন রাজশাহী লটারী পাবলিক কার্যালয়ে এফিডেভিট করে ২৫ লক্ষ টাকা দেন মোহর ধার্য্য করা হয়। পরের দিন ১৩ জুন ৮ জন স্বাক্ষী রেখে তানোর পৌর সদরের সালাউদ্দিন কাজীর কার্যালয়ে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে নিকাহ্নামা আবার রেজিষ্ট্রী হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, চলতি বছরের ২৯ জুলাই সোমবার বিকেল ৪টার দিকে আসামি মহসিন রেজা যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মারধর শুরু করেন। এসময় মহসিনের বোন জায়েদা বলেন, আপাতত ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা যৌতুক না দেয়া পর্যন্ত ঘরে আটকে রাখ। এসময় মহসিন ও তার বোন জায়েদা, রাশেদা এবং দুলাভাই নুরুল ইসলাম বর্বর নির্যাতন করে ঘরে বন্দি রাখে।
এনিয়ে জিওল গ্রামের গ্রাম প্রধান মোজাফ্ফর মন্ডল জানান, বিয়ের পর থেকে তার স্ত্রীকে যৌতুকের দাবিতে প্রায় সময় নির্যাতন করে আসছেন মহসিন। তিনি না কি ইদানিং আবার ফেরেস্তা নাম উপাধি পেয়েছেন। এঅবস্থায় ২০০৮ সালে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন মামলা মোকদ্দমা করে তার স্ত্রী রুমা খাতুন। মামলায় শর্তসাপেক্ষে জবাবন্দি দিয়ে কোর্টের মাধ্যমে স্ত্রীকে নেন মহসিন। তিনি শোনেছেন মহসিনের ঋনের টাকা তার শ্বশুড়কে পরিশোধ করতে হবে। তবেই স্ত্রীকে নেবে মহসিন। এটা অমানবিক ও যৌক্তিক।
মহসিনের শ্বশুড় আব্দুল করিম কান্না জনিতকণ্ঠে জানান, জামাইয়ের অনেক জমি-জমা থাকা সত্তে¡ও লোভী প্রকৃতির। সে ধানাঢ়্য ও সম্পদশালী বলে অহাংকার করে। তার মেয়েকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করবে। এজন্য মেয়েকে পারমিশন দিতে হবে। নইলে তালাক নিতে হবে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিওতে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ঋণ আছে। এছাড়াও প্রায় ৪০ বিঘা জমি ৫০ লক্ষ টাকায় বন্ধক রাখা হয়েছে। মহসিন ঋণগ্রস্থ হওয়ায় তার ঋণ আমাকে শোধ করতে হবে বলে দম্ভোক্তি করে। তবেই আমার মেয়েকে নেবে মহসিন।
তিনি আরো জানান, অনেক কিছু দেবার পরও বর্তমানে মেয়ের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের মাত্রা বেরে গেছে। ফলে মেয়ের জীবনে অশান্তি নেমে এসেছে। এঅবস্থায় তার মেয়েকে তালাকও দিয়েছে যৌতুক লোভী জামাই মহসিন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত মহসিন রেজা ও নুরুল ইসলাম নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলছেন, রুমার চলাফেরা ভাল নয়। তার স্ত্রী তার বাধ্য নয়। একারণে তাকে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এখন যা হবার তা আইনি প্রক্রিয়ায় হবে। তবে, তার স্ত্রীর মামলা থেকে তিনি জামিনে মুক্ত আছেন বলে জানান মহসিন।
এনিয়ে তানোর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খায়রুল ইসলাম জানান, তিনি ঘটনা সম্পর্কে অবগত নন। আদলত থেকে মামলার নথি আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওসি।
সাইবার নিউজ একাত্তর/ ২৪শে আগষ্ট, ২০১৯ ইং/ আব্দুর রাজ্জাক(রাজু)
© কপিরাইট : খন্দকার মিডিয়া গ্রুপ
বাল্যবিবাহ রোধ করুন, মাদক মুক্ত সমাজ গড়ুন।