রবিবার, ০৭ মার্চ ২০২১, ০২:৩১ অপরাহ্ন
সাইবার নিউজ একাত্তর ডেস্ক :
পাখিদের শেষ সম্বল এলাকার মানুষ ও আমগাছ। চার বছর ধরে আশ্রয় নিয়ে বাসা বেঁধে আছে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আম বাগানে। কয়েক হাজার শামুকখোল পাখির সহাবস্থান সেখানকার আমবাগানেই। তাই বাসিন্দারা চাইছেন সরকারি ভাবে এই ঐতিহ্য বাহী জায়গাটিকে সংরক্ষণ করা হোক। যাতে আগামী দিনে এলাকায় পাখিরা টিকে থাকে।
কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের বাসা ভেঙ্গে দেওয়ায় ফলে হুমকির মুখে পড়ে প্রায় কয়েক হাজার পাখি। আম ব্যবসায়ী আতাউর রহমান বাগান পরিচর্যা করতে গিয়ে কয়েকটি আমগাছের বাসা ভেঙ্গে দেন। এতে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে পাখিরা। তবে পাখিপ্রেমী রফিকুল ইসলামসহ স্থানীয়দের বাঁধার মুখে পড়েন ওই আম ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, পাখিরা বাসা না ছাড়লে তাদের বাসা থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে। এমনকি তাদের বাসা ভেঙেও দেওয়া হবে। এ খবর জানার পর পাখির পাশে দাড়ায় র্যাব।
বুধবার রাজশাহী র্যাব-৫ এর এ্যডিশনাল ডিআইজি (সিও) মাহফুজুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, পাখির বাসাগুলো কখনোই ভেঙে দেওয়া যাবে না। এসময় তিনি বলেন,র্যাবের মহাপরিচালকের নির্দেশে পাখী সংরক্ষনের দায়িত্ব নিবে র্যাব।
বাগান মালিকের সংগে কথা বলে প্রয়োজনীও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি। পাখিরা যাতে থাকতে পারে এবং বাগান মালিক ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে বিষয়েও র্যাবের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন এই কর্মকর্তা । এ সময় সাথে ছিলেন বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম ।
পাখিপ্রেমী রফিকুল ইসলাম বলেন, এই গ্রামের মুকুল,ছানা ও শাফিকুল ইসলামের আম বাগানের বেশ কিছু আমগাছে কয়েক হাজার পাখির বাসা রয়েছে। সব বাসাতেই বাচ্চা রয়েছে। বাচ্চাগুলো উড়তে শিখতে অন্তত আরও এক মাস সময় লাগবে। এখন পাখিগুলোর বাসা ভেঙে দিলে হাজার হাজার পাখির বাচ্চা মারা পড়বে। এরই মধ্যে কয়েকটি বাসা ভেঙে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন প্রায় শতাধিক পাখির বাচ্চা ধরে নিয়ে গেছে। তিনিসহ কয়েকজন গিয়ে আতাউর রহমানের কাছে আপত্তি জানানোর পরে ১৫ দিন সময় দেন তিনি । তিনি জানান,এর আগে বন অধিদপ্তর থেকে এই আমগাছের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে বন অধিদপ্তরের আর কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
আম ব্যবসায়ী আতাউর রহমান বলেন, ৭ লাখ টাকা দিয়ে তিনি শতাধিক আমগাছ দুই বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। প্রায় ২৫টি গাছে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধে বাচ্চা ফুটিয়েছে। গত বছর পাখি থাকার কারণে তার আম নষ্ট হয়েছে। এবার আমগাছ পরিচর্যা করতে চান। এ জন্য পাখির বাসা ভেঙে গাছে ওষুধ ছিটাতে চান। পাখিপ্রেমীদের প্রতিরোধের মুখে মঙ্গলবার থেকে পাখিদের জন্য ১৫ দিন সময় বাড়িয়েছেন। গত চার বছর ধরে শামুকখোল পাখিরা এই বাগানে বাসা বেঁধে আছে। এই বাগানে বাচ্চা ফোটায়। বর্ষার শেষে এসে বাচ্চা ফুটিয়ে শীতের শুরুতে এরা আবার চলে যায়।
এদিকে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে এই বাগানের পাশেই সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে আইন অনুযায়ী যে কোনো বন্যপ্রাণী আটক, হত্যা, শিকার, পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয় দন্ডনীয় অপরাধ। যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছরের কারাদন্ড এবং ১৫ লাখ টাকা জরিমানা। পাখির সুরক্ষার জন্য কাজ করেন স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী সুলতান আলী । তিনি বলেন, গত ছয় মাস থেকে তিনি তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পাচ্ছেন না।
এ দিকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারমিতা রায় এর প্রয়োজনীয় নির্দেশনার আরজির প্রেক্ষিতে আমবাগানে থাকা পাখির বাসাগুলো ভাঙা যাবে না বলেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই এলাকা কেন অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সামিউল আলম। আইনজীবী পারমিতা রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন ।
সাইবার নিউজ একাত্তর / ৩১শে অক্টোবর ২০১৯ ইং আব্দুর রাজ্জাক (রাজু)
© কপিরাইট : খন্দকার মিডিয়া গ্রুপ
বাল্যবিবাহ রোধ করুন, মাদক মুক্ত সমাজ গড়ুন।